সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের নতুন মামলার রায় আজ ঘোষণা হবে অভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত’ বলাকে আদালত অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা মানলেন চিফ প্রসিকিউটর ফিরোজ সরকার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে: মাহফুজ আলম বিডিআর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাহিনীকে দুর্বল করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা জনপ্রিয় টিকটকার ববি গ্রেভস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর প্রথমবার মুখ খুললেন হেমা মালিনী নায়িকা পপিকে আইনি নোটিশ পাঠালেন চাচাতো ভাই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেনস সুমন আর নেই শাকিবের ‘পাইলট’ লুকের ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি

শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ারের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুর্যোগের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে, একই সঙ্গে সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩২-এ পৌঁছেছে। পাশাপাশি নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৭৬ জন। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য শনিবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানিয়েছে, কঠোর আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং সাড়ে ৭৮ হাজার মানুষকে সরকার পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।

প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েক জরুরি আইন ঘোষণা করেছেন। ডিএমসির মহাপরিচালক সম্পাথ কোটুউইগোদা জানান, তাঁরা এখন পর্যন্ত ১৩২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৭৬ জন। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। শনিবার, দেশটির সামরিক বাহিনী অনুরাধাপুরা জেলার টানা ২৪ ঘণ্টার অভিযানে এক জার্মান পর্যটকসহ ৬৯ জন বাসযাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

একটি বাসের যাত্রী সাংবাদিকদের কাছে বলছিলেন, নৌবাহিনী রশি দিয়ে পানি পার হতে সাহায্য করেছে এবং পরে তাদের কাছের এক বাড়ির ছাদে উঠতে সহায়তা করেছে। শান্তা নামের ওই যাত্রী বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান। ছাদে থাকাকালীন একাংশ ধসে তিন নারী পানিতে পড়ে যান, কিন্তু তাদের আবার ছাদে তুলতে সক্ষম হয়েছে উদ্ধারকারীরা।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারের প্রচেষ্টা বাতিল হয়েছিল কারণ ছাদ উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পরে নৌকায় করে তাদের উদ্ধার করা হয়।

দেশের মধ্যাঞ্চলের বদুল্লা জেলায় বেশ কিছু সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, যার ফলে অনেক গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বদুল্লার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাসপান্না গ্রাম থেকে সামান কুমারা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে দুজন মারা গেছেন। অন্যরা একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। বেশীরভাগ মানুষ এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন। রাস্তার ধসের কারণে কেউ বেরোতে বা ঢুকতে পারছে না। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।’

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িঘরে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং পানি পরিশোধন কেন্দ্রে ডুবে গেছে। এছাড়া অনেক এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন।

শনিবার, ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া দ্বীপদেশটির কাছ থেকে সরে উত্তরে ভারতের দিকে এগোচ্ছে। ভারতের চেন্নাই বিমানবন্দর আজ মোট ৫৪টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণ ও তীব্র বাতাসে পরিবেশ আরও অস্বস্তিকর হবে।

মধ্যাঞ্চলের ক্যান্ডি জেলায় নতুন করে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাজধানী কলম্বো থেকে ১১৫ কিলোমিটার পূর্বের এই জেলায় প্রধান সড়কটি পানি দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে গেছে।

শ্রীলঙ্কার সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য official আবেদন জানিয়েছে। এ ছাড়া, দেশের বাইরে অবস্থানরত শ্রীলঙ্কানদের জন্য অর্থ পাঠানোর জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিরিনি আমরাসুরিয়া কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি প্রকাশ করেছেন এবং জরুরি সহায়তা পেতে সাহায্য চেয়েছেন। ভারত প্রথমে দ্রুত দুটি বিমানে করে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। এছাড়াও, কলম্বোতে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা ভারতীয় এক যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে নিজের রেশন দান করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আরও সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এটি ২০১৭ সালের পর শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেখানে বন্যা ও ভূমিকম্পে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ২০০৩ সালে হওয়া বন্যা ও ভূমিধসের সময় দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৫৪। এটি ছিল ২০০৩ সালের জুন মাসের ঘটনা, যা ছিল এই দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।

সূত্র: এএফপি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd